মুখের দুর্গন্ধ, আপনার করনীয়
সুন্দর হাসিমুখটি সবাই পছন্দ করে। কিন্তু এ হাসি হাসতে গিয়ে যদি আপনাকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় তা হবে অতি লজ্জার। মুখের দুর্গন্ধ বড় বিব্রতকর। রোগ এবং সমস্যা হিসেবেও জটিল। মুখের এই দুর্গন্ধ কেন হয়, তা নিয়ে বিজ্ঞানের গবেষণা বহুদিন যাবৎ চলে আসছে। সে সব গবেষণা থেকে সুর্নিদিষ্টভাবে কয়েকটি কারণকে চিহ্নিতও করা গেছে।
কারণঃ
*খাদ্য আবরণ জমে থেকে ডেন্টলি প্লাক সৃষ্টি এবং মাড়ির প্রদাহ (পেরিওডেন্টাল ডিজিজ)
*মুখের ঘা বা ক্ষত হওয়া
*আঁকাবাঁকা দাঁত থাকার কারণে খাদ্য কণা জমা অপরিষ্কার কৃত্রিম দাঁত বা ক্রাউন ব্রিজ
*জিহবা অপরিষ্কার থাকার কারণে
*খাদ্যকণা ও জীবাণুর অবস্থান ছিত্রাক বা ফাঙ্গাস জাতীয় ঘা
*মুখের ক্যান্সার
*ডেন্টাল সিস্ট বা টিউমার
এছাড়া দূর্ঘটনার কারণে ফ্রেকচার ও ক্ষত তা ছাড়া দেহের অন্যান্য রোগের কারণেও মুখের দুর্গন্ধ হতে পারে। যেমন- পেপটিক আলসার, লিভারের রোগ গির্ভাবস্থা, কিডনি রোগ, রিউমেটিক রোগ বা বাতজনিত রোগ, ডায়াবেটিস বা বহুমুত্র, হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ, গিলা বা পাকস্থলীর ক্যান্সার, এইচ আইভি এইডস রোগ, হৃদরোগ মানসিক দুশ্চিন্তা, নাক, কান, গলার রোগ। সুতরাং স্থানীয়ভাবে কারণগুলো দূর করার পরও যদি দুর্গন্ধ থেকে যায় মুখে তবে দেহের অন্যান্য সাধারণ রোগের উপস্থিতির পরীক্ষাগুলো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। মুখের দুর্গন্ধ অনেক ক্ষেত্রে নিজে অনুভব করা যায় না, অন্যরা বুঝতে পারেন_ এটাই এর বড়ো সমস্যা। এতে বন্ধু-বান্ধব ছিটকে যায়। অনেকেই বন্ধু ও প্রিয়জনের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হন এবং অপ্রিয় হয়ে যান। এ রকম অবস্থা বুঝলে লজ্জা ভুলে নিকটজন কাউকে জিজ্ঞেস করা ভালো যে, তার মুখে কোনো দুর্গন্ধ পাওয়া যায় কিনা। সবার কাছে লজ্জা পাওয়ার চেয়ে নিজ থেকে সাবধান হওয়া ভালো। অথবা নিজের মুখের সামনে হাত রেখে হা করে বাতাস বের করে নাকের দিকে ফিরিয়ে নিলে নিজেই বুঝতে পারবেন মুখে দুর্গন্ধ আছে কিনা।
মুখের দুর্গন্ধ হলে করণীয় :
একটি পরিষ্কার ভালো দাঁতের ব্রাশ ও পেস্ট দিয়ে দাঁতের সবগুলো অংশ ভেতর-বাহির পরিষ্কার করুন (তিন বেলা খাবারের পর)। জিহ্বা পরিষ্কারের জন্য জিবছুলা ব্যবহার করতে পারেন। যে কোনো ধরনের মাউথওয়াস (ক্লোর হেক্সিডিন জাতীয়) ২ চামচ মুখে ৩০ সেকেন্ড রেখে ফেলে দিয়ে আবার অল্প গরম লবণ পানিতে কুলকুচা করুন। প্র্রতিদিন অন্তত দু’বার সকালে ও রাতে (আহারের পর) এটা করবেন। মুখের ভেতরে একটি লং/এলাচির দানা রাখুন। প্রতিবার আহারের পর সম্ভব হলে দাঁত ব্রাশ অথবা ভালোভাবে কুলকুচা করে ফেলুন।
বিশেষভাবে যা করবেন : দাঁত ব্রাশ করলেই শুধু ময়লা বা খাদ্যকণা পরিষ্কার হয় না। কারণ দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে বা মাড়ির ভেতরে অনেক সময় খাদ্যকণা জমা থেকে পচন শুরু হয়। তাই যাদের দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে খাদ্য জমা হয় বুঝতে হবে ডেন্টাল ফ্লস (এক ধরনের পিচ্ছিল সুতা) বা ডেন্টাল টুথ পিকসের (এক ধরনের জীবণুমুক্ত শলাকা) সাহায্যে খাদ্য কণাগুলো বের করা প্রয়োজন। এই ডেন্টাল ফ্লস বা সুতো এবং জীবাণুমুক্ত শলাকা ব্যবহার বিধি একজন ডেন্টাল সার্জনের কাছ থেকে জেনে নেওয়া ভালো। অনেক সময় এই ফাঁকগুলো ডেন্টাল ক্যারিজ বা মাড়ির রোগের কারণেও হতে পারে, তাই দাঁতের ডেন্টাল এক্স-রে করিয়ে নেওয়ার পর চিকিৎসা দরকার হয়।
চিকিৎসা কি : মাড়ির প্রদাহ, ডেন্টাল ক্যারিজ, মুখের ক্ষত, কৃত্রিম দাঁতের ও ক্রাউনের অস্বাস্থ্যকর অবস্থা ইত্যাদির চিকিৎসা একজন ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শে সারিয়ে তুলতে হবে। মুখের স্থানীয় কারণের সঙ্গে অথবা কারণ দূর হওয়ার পরও দুর্গন্ধ থেকে থাকলে দেহের অন্যান্য রোগের উপস্থিতি আছে কিনা দেখতে হবে তারপর যা যা পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন সেগুলো করিয়ে রোগ নির্ণয় হওয়ার পর পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো চিকিৎসা নিতে হবে। বাজারে অনেক ধরনের মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ওষুধ পাওয়া যায়, যাদের গুণগতমানের চাইতে বিজ্ঞাপনের বাহার বেশি। সুতরাং প্রতিষ্ঠিত কোনো ওষুধ কোম্পানির ওষুধ এবং তার গায়ে লেখা লেবেলে সময়সীমা ও ব্যবহারবিধি দেখে ব্যবহার করা প্রয়োজন। তবে সবচেয়ে ভালো হবে একজন মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ বা মাউথওয়াশ ব্যবহার করা।
জরুরি বিষয় : আরও একটি জরুরি বিষয় হচ্ছে, অনেকেরই কতগুলো বদ অভ্যাস থাকে, যেগুলো বাদ দিতে হবে, যেমন :
ধূমপান করা, পান, সুপারি, জর্দা, গুল, তামাকপাতা ইত্যাদি চিবানো। মিদ বা অ্যালকোহল পান মাদকদ্রব্য সেবন ইত্যাদি। এসব বদ অভ্যাসের কারণে শুধু মুখের রোগ এবং দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় শুধু তাই নয়, দেহের মারাত্মক মরণঘাতী রোগ যেমন ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। সুতরাং দুর্গন্ধ দূর করতে শুধু নয়, জীবন বাঁচাতে এসব বদ অভ্যাস ত্যাগ করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে পরিবারের অন্য সদস্যকেও জীবনের ঝুঁকি থেকে রেহাই দেওয়া সম্ভব হবে।
দাঁত পরিষ্কার রাখার উপায় : দাঁত পরিষ্কার রাখার অন্যতম প্রধান উপায় হলো, দু’বেলা অর্থাৎ সকাল ও রাতের খাবারের পর দাঁত ব্রাশ করা ও ভালোভাবে প্রতিবার খাবারের পর কুলকুচা করা।
ব্রাশ করার সঠিক নিয়ম : উপরের পাটির দাঁতের ওপর টুথব্রাশ চালিয়ে নিচের পাটির দাঁতের দিকে নামাতে হবে। আবার নিচের পাটি থেকে উপরের পাটির দিকে উঠাতে হবে। এভাবে উপর-নিচ উঠানামা করিয়ে ব্রাশটিকে সবদিকেই নিতে হবে। তারপর হা করে আবার ভেতরের দাঁতের অংশে ব্রাশ করতে হবে। ভেতর-বাইরের অংশ ব্রাশ করা হয়ে গেলে দাঁতের উপরের অংশ (খাদ্য চিবানোর অংশগুলোকে) ব্রাশ করতে হবে। এরপর জিহ্বার ওপর খানিকক্ষণ ব্রাশটিকে সামনে পেছনে ঘষতে হবে। ব্রাশ করা শেষ হয়ে গেলে ভালোভাবে কুলকুচা করতে হবে। নিয়মিত কিছু শক্ত ফলমূল খাওয়া মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য ভালো। যেমন আমলকী, পেয়ারা, জাম্বুরা, আপেল, কামরাঙ্গা ও আহারের সঙ্গে সালাদ ইত্যাদি।
মনে রাখবেন, একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ও সৌন্দর্য অনেকখানি নির্ভর করে তার মুখের স্বাস্থ্যগত অবস্থা তথা দুর্গন্ধমু্ক্ত মুখ গহ্বরের ওপর। তাই আর দেরি নয়, আসুন আজ থেকেই মুখের যত্নের ব্যাপারে সচেতন হই।
[ ভাল লাগলে পোস্ট এ অবশ্যই লাইক দিবেন , লাইক দিলে আমাদের কোনো লাভ অথবা আমরা কোনো টাকা পয়সা পাই না, কিন্তু উৎসাহ পাই, তাই অবশ্যই লাইক দিবেন । ]
Leave a comment