• hi

মমির অভিশাপ

hi

 ‘মমি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে তুমি হয়তো বিপুল ধনরত্ন পাবে৷ বিরাট ধনীও হয়ে যেতে পারো৷ তবে দুর্ভাগ্য তোমার পিছন ছাড়বে না৷ মমির অভিশাপে শেষমেষ প্রাণটাই হারাতে হবে তোমাকে’৷ এমনি একটা বিশ্বাস মিসরে বেশ পুরানো৷ মমির অভিশাপের ভয়ে সহজে কেউ মমি নাড়াচাড়া করতে চাইত না৷ আজো চায় না বহু লোক৷

এমন ধারণার জন্ম ১৯২২ সালে৷ সে বছর হাওয়ার্ড কার্টার নামে এক প্রত্নতাত্তি্বক মিসরের লুক্সরের কাছে ‘রাজ উপত্যকা’ নামে পরিচিত একটি এলাকায় কিশোর সম্রাট তুতান খামেনের সমাধি সৌধের একটা ছিদ্র দিয়ে ভিতরে উঁকি দিয়ে থ’ হয়ে গেলেন বিস্ময়ে৷ সম্রাট তুতান খামেনের মমির সঙ্গে যে বিপুল ধনরত্ন তিনি দেখেছিলেন তাতে তার বিস্ময় জাগারই কথা! ৩ হাজার বছর আগের এসব সামগ্রী বস্তুগত মূল্যমানে তো বটেই, প্রত্নতাত্তি্বক গুরম্নত্বের দিক দিয়েও অমূল্য৷ বিশ্বের প্রায় তাবত্‍ পত্র-পত্রিকায় তুতান খামেনের মমির সঙ্গে পাওয়া এই বিপুল ধনরত্নের খবর বড় বড় শিরোনামে ছাপা হয়৷ ফলে বলা যায়, এ ব্যাপারে বিশ্ববাসীর কৌতূহলও ছিল তুঙ্গে৷ তুতান খামেনের মমি আর এসব ধন-রত্নের খবর মানুষ পড়ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে৷ এই মমি আর এই বিপুল ধন-রত্ন আবিষ্কারের অল্প দিনের মধ্যেই মারা যান এই অভিযানের আয়োজক লর্ড কার্নাভন৷ শুধু তাই নয়, তুতান খামেনের সমাধি সৌধের দ্বার খোলার সময় সেখানে যে ২৬ জন উপস্থিত ছিলেন, তাদের মধ্যে ৬ জনের মৃতু্য হয় ১০ বছরের মধ্যে৷ যদিও প্রত্নতাত্তি্বক হাওয়ার্ড কার্টার, যিনি এই কিশোর সম্রাটের মমি আর তার ধনরত্নের সন্ধান পেয়েছিলেন, তিনি বেঁচেছিলেন ১৯৩৯ সাল পর্যনত্ম৷ সাধারণ মানুষের বিশ্বাস, মমির অভিশাপেই প্রাণ দিতে হয়েছে এতগুলো মানুষকে৷

বিশিষ্ট ফরাসি মিশরবিদ দোমিনিক মঁসেরা নানারকম পরীৰা-নিরীৰা চালানোর পর এই মীমাংসায় পেঁৗছান যে, ‘মমির অভিশাপ’ এই ধারণাটাই উদ্ভট৷ শুধু তিনি নন, আরো অনেক গবেষক একইরকমের সিদ্ধানত্ম ঘোষণা করেন৷ কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষের বিশ্বাসে চিড় ধরেনি৷ বিশেষ করে ‘লিটল উওম্যান’ বইয়ের লেখিকা লুসিয়া অ্যালকট ‘লস্ট ইন আ পিরামিড’ এবং মমির অভিশাপ’ লিখে মানুষের সেই অন্ধ বিশ্বাসকেই উস্কে দেন৷

দোমিনিক মঁসেরা বলেন, প্রাচীন আমলে যে সময় মানুষ মৃতদেহকে মমি করে সংরৰণ করত, তখন কিন্তু মমির অভিশাপ বলে কোন কিছুতে বিশ্বাস করত না মিশরীয়রা৷ তুতান খামেনের মমি আবিষ্কারের পরই এমন ধারণা জন্ম নেয়৷ তবে কায়রোর আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের মিশর তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সেলিমা ইকরাম অবশ্য বলেন, মমি এবং তার সঙ্গে দেয়া ধন-রত্নের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রাচীন আমল থেকেই ‘মমির অভিশাপের’ এই বিশ্বাস মিশরীয়দের মধ্যে প্রচলিত ছিল৷ তিনি বলেন, গির্জা ও সাকারা এলাকায় এমন কিছু মমি পাওয়া গেছে, যেগুলোর সঙ্গে মমির অভিশাপের কথা উলেস্নখ রয়েছে৷ রাজাদের শেষ বিশ্রামে কেউ যাতে বিঘ্ন না ঘটায়-সেজন্যই এমন ধারণা সৃষ্টি করা হয় বলে তিনি মনে করেন৷ তিনি বলেন, ঐসব মমির সঙ্গে পাওয়া তাম্রপত্র বা প্যাপিরাসে উলেস্নখ আছে, কেউ যদি মমি বা মমির সঙ্গে রৰিত ধনরত্ন সরিয়ে নেয় তবে ঈশ্বর তাকে অভিশাপ দেবেন৷ তাকে সিংহ বা কুমিরে হত্যা করবে অথবা সাপ বা বিছার কামড়ে প্রাণ হারাবে৷

অবশ্য একালের অনেক বিজ্ঞানী বলছেন, মমি বা এর ধনরত্ন নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে করম্নণ পরিণতি বরণের জন্য কোন অভিশাপের দরকার নেই৷ প্রকৃতির অভিশাপেই তার মৃতু্য ঘটতে পারে৷ তারা বলছেন, হাজার হাজার বছর ধরে বন্ধ হয়ে থাকা সমাধি সৌধের মধ্যে জমে থাকা প্রাণঘাতি গ্যাসের কারণে যে কারো মৃতু্য পর্যনত্ম হতে পারে৷ তারা বলছেন, এসব সমাধি সৌধে শুধু যে মমি রাখা হত, তা নয়৷ ধনরত্ন, হসত্মশিল্প সামগ্রী, খাবার-দাবারও রাখা হত৷ আর এগুলো থেকে প্রাণঘাতি গ্যাস উত্‍পন্ন হওয়া খুবই স্বাভাবিক৷ গবেষণাগারের সাম্প্রতিক পরীৰায় অনেক মমির সঙ্গে এমন কিছু পদার্থ ও ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান মিলেছে যেগুলোর স্পর্শে মানুষের ফুসফুসে রক্তৰরণ, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হতে পারে৷ যদিও সব বিজ্ঞানী এ ব্যাপারে একমত হতে পারেননি৷


Leave a comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।


*


hi
online partners namaj.info bd news update 24 Add

Read previous post:
মমির ভয়ানক কাহিনী!

অবিশ্বাস্য বা কাকতালীয় মনে হলেও পৃথিবীতে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা বিশ্বাস করা সত্যিই কঠিন। তেমনই বেশ কিছু ঘটনা আছে...

Close