কিভাবে মানাবেন স্বামীকে
সংসার তরঙ্গে কর্মজীবী স্ত্রীর কাছ থেকে প্রাপ্তি হিসেবটা যতই ভারী হোক না কেন, তাতে ব্যাপ্তি যোগ হওয়া মাত্রই কিন্তু তরী টলমল করে উঠে। অফিস পাড়ার বৈরী ভাব থেকে ছুটি নিয়ে স্ত্রী যখন পা বাড়ায় ঘরকোণে, তখন তাকে গ্রাস করে এক তীব্র অশান্তির ভয়। স্বামীকে বোঝাতে অক্ষম ব্যস্ত অফিস পাড়ার কথা। আসলে গ্লোবালাইজেসন নিয়ে যতই বুলি আওড়ানো হোক না কেন এখানো সমাজের পুরুষ মন মানতে চায় না, মেয়েদের কর্মক্ষেত্রেও নানান প্রতিবন্ধকতা, প্রতিযোগিতা আর পদন্নোতি থাকতে পারে। এমন সংকীর্ণ পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে কি করে সব ম্যানেজ করবেন, পড়ে নিন:
১. কথার পিঠে কথা বলে, তুমুল বাক বিতন্ডার সৃষ্টি করবেন না। পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। স্বামীর মাথা ঠান্ডা হলে তাকে যুক্তি, উদাহরণ দিয়ে বোঝান আপনার উপার্জনটুকু সংসারে কতটা প্রয়োজনীয়।
২. বন্ধুদের আড্ডায়, আত্মীয়-স্বজনদের ভীড়ে আপনার স্বামীর সহযোগিতার প্রসংশা করুন।
৩. আপনার স্বামীর অফিস, কাজ ও পদমর্যাদাকে গুরুত্ব দিন।
৪. যতটা পারা যায় স্বামীকে বেশী সময় দিন। প্রয়োজনে নিজের দৈনন্দিন কাজের রুটিনে পরির্বতন আনুন যেন স্বামীর সাথে আর একটু অন্তরঙ্গ সময় কাটানো যায়।
৫. অফিসের সমস্যা, সমসাময়িক পরিস্থিতি এসব বিষয় নিয়ে আপনার স্বামীর সাথে আলোচনা করুন। তার পরামর্শ নিন। এতে তার মধ্যে আপনার কর্মজীবন সম্পর্কে পজেটিভ ধারণা তৈরি হবে।
৬. স্বামীকে প্রতিবন্ধক বা শক্র ভাববেন না। তাহলে কখনোই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবেন না। সমাধান আসবেনা কখনোই।
৭. একজন রেগে থাকলে অপরজন ও যদি পাল্লা দিয়ে অভিমান করে বসে থাকেন, তাহলে দুরত্ব শুধু বেড়েই যাবে।
৮. যদি সম্ভব হয় তাহলে আপনার অফিসের কলিগদের সাথে আপনার স্বামীর পরিচয় করিয়ে দিন। তবে সাবধান, এমন কাউকে আবার পরিচয় করিয়ে দেবেন না যে এই সুযোগে আপনার সম্পর্কে আপনার স্বামীর কান ভারি করার সুযোগ পায়।
৯. স্বামীর সঙ্গে বেতনের টাকা, অফিস আওয়ার কিন্তু অফিস সম্পর্কিত কোনো কিছুতেই ঝগড়ায় লিপ্ত হবেন না। মনে রাখবেন, ক্যারিয়ারের পাশাপাশি সংসারও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
১০. এমন বিষয়গুলো নিয়ে যখন কথা, আলোচনা করবেন, চেষ্টা করুন শুধুই আপনার দু’জন কথা বলতে। এর মাঝে বাইরে থেকে কাউকে আপনি কথা বলতে, পরামর্শ দিতে দিবেন না। তাহলে কিন্তু তিল, তাল হতে বেশী সময় লাগবে না।
শেষতক বলতে হয়, স্বামীর কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে কিন্তু আবার চাকরি ছাড়ার কথা ভাববেন না। সবকিছুর ক্ষেত্রেই পজেটিভ সিদ্ধান্তগুলোকে প্রাধান্য দিন। চেষ্টা করুন এগিয়ে আসার। আলোচনা করুন। আপনার স্বামীকে বোঝান, চাকরিটা আপনার সংসারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে এতে যেন স্বামীকে ছোট করা না হয়। সংসারের জন্য দু’জন আর দু’জনকে নিয়েই তো সংসার।
পপির স্বামী তারেক সবসময় ব্যস্ত। ব্যস্ত তার ব্যবসায়ীক কাজকর্মে। বাড়ি ফিরতে রোজই দেরি হয়। পপিও একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করে। তবুও বাড়ির যাবতীয় কাজ তাকে করতে হয়। তারেক ভুলেও খবর নেয় না। ধরেই নেয় সংসারের এই দায়িত্বগুলো পপিরই। খরচ দেওয়াটাই শুধু তার কর্তব্য। মাঝে মাঝে যখন একা একা থাকে তার মনে হয়, পপি কেন এতটা আশা করে? আমারও তো কিছু এক্সপেক্টেশন থাকতে পারে। কিন্তু সে জানে তাদের এক্সপেক্টেশনগুলো মিলবে না। এভাবেই দেখা দেয় দাম্পত্যের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিতে অমিল। নিজেরা যে কাজটা করতে পছন্দ করে না, তার বোঝা অন্যের ঘাড়ে চাপানোর মধ্যে স্বার্থপরতার গন্ধ রয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষটির ওপরই আমরা এই জুলুম চাপিয়ে দেই। এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজন একটু সহমর্মিতা আর যত্নের।
নতুনভাবে চিন্তা করুন ঃ স্বামী বা স্ত্রীর কাছে প্রত্যাশা যেন লাগামছাড়া না হয় সেটার দিকে সব সময় নজর রাখুন। বাইরের কাজের সঙ্গে বাড়ির কাজ সব সময় ব্যালান্স করে চলুন। তাতে পরিশ্রমও ভাগ হয়ে যাবে, একে অপরের সঙ্গও পাবেন। সব কাজ একা করতে যাবেন না। আপনার সঙ্গী নিজে থেকে ইচ্ছা প্রকাশ না করলেও তাকে ডেকে নিন। হালকা মিউজিক চালিয়ে গল্প করতে করতে দুজনে কাজটা করুন। খোলা গলায় ওর কাজের প্রশংসা করুন সবার কাছে। সঙ্গীর প্রতি ক্ষোভ বা রাগ থাকলে তা মনে চেপে রেখে কষ্ট পাবেন তা হয় না। কীভাবে সমস্যাটা মিটিয়ে ফেলা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা করুন। দিনের মধ্যে কিছুটা সময় নিজেদের জন্য রাখুন। কাজের ফাঁকে ফ্রি টাইমে ফোন করে একটু গল্প, মাঝে মাঝে মজার এসএমএস, পছন্দের উপহার আপনাদের কেজো সম্পর্কে নতুন রং লাগাবে। সঙ্গীকে টেকেন ফর গ্রান্টেড ভাববেন না। দায়িত্ব ভাগ করুন। অপছন্দের কাজও মাঝে মাঝে করে দেখুন। উদাসীনতা দাম্পত্যের সবচেয়ে বড় শত্রু। সঙ্গীর ভালোলাগা নিয়ে মাথা না ঘামানো অন্যায় ছাড়া আর কিছু নয়। সবচেয়ে বড় কথা প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির অমিল কাটাতে দুজনকেই এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই সংসার হবে সুখের। দাম্পত্য হবে ঝুটঝামেলা মুক্ত।
[ ভাল লাগলে পোস্ট এ অবশ্যই লাইক দিবেন , লাইক দিলে আমাদের কোনো লাভ অথবা আমরা কোনো টাকা পয়সা পাই না, কিন্তু উৎসাহ পাই, তাই অবশ্যই লাইক দিবেন । ]
Leave a comment