• hi

জরায়ুমুখের ক্যানসার

hi

জরায়ুমুখের ক্যানসার আজও বাংলাদেশের নারীদের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। নারী ক্যানসার রোগীদের ২৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি চারজনে একজন এ রোগে আক্রান্ত।

উন্নত দেশে কীভাবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে এসেছে?
নারীশিক্ষার প্রসার, উন্নত জীবনযাপন, স্বাস্থ্যসচেতনতা সর্বোপরি যুগান্তকারী ‘পেপস স্মেয়ার টেস্ট’ আবিষ্কার। এর ফলে ওই সব দেশে এ রোগের প্রকোপ কমে এসেছে এবং এ রোগজনিত মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে।

পেপস স্মেয়ার টেস্ট কী?
এটি একটি সহজ পরীক্ষা। জরায়ুমুখ থেকে রস নিয়ে অণুবীক্ষণযন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা। এ পরীক্ষা দিয়ে ক্যানসার, ক্যানসার হওয়ার পূর্বাবস্থা ও জরায়ুমুখের অন্যান্য রোগ যেমন প্রদাহ (ইনফ্লামেশন) শনাক্ত করা যায়। এতে কোনো ব্যথা হয় না। এই টেস্টের খরচও কম। সাধারণত বিবাহিত নারীদের ২১ বছরের পর থেকে এ টেস্ট শুরু করা যেতে পারে। ৩০ থেকে ৬৪ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি তিন বছর পর পর এই টেস্ট করা উচিত। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে এ রুটিনের পরিবর্তন হতে পারে।

জরায়ুমুখের ক্যানসার
খুব ধীরে ধীরে সৃষ্টি হওয়া এক রোগ। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জরায়ুমুখের স্বাভাবিক কোষ পরিবর্তিত হতে থাকে। একসময় তা ক্যানসারে রূপ নেয়। ২০ বছরের কম বয়সীদের নিচে এ রোগ হয় না। এ রোগে আক্রান্তরা সাধারণত ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী হয়ে থাকেন। ৬০ বছরের পরও এ রোগ হতে পারে, তবে তাঁদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। উপযুক্ত চিকিৎসায় এ রোগ শতভাগ নিরাময় করা যায়।

হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি)
হিউম্যান পেপিলোমা বা এইচপি ভাইরাস জরায়ুমুখের ক্যানসারের একটি অন্যতম কারণ, তবে একমাত্র নয়। যৌন সংযোগে এর সংক্রমণ ঘটে। এযাবৎ ১০০ ধরনের এইচপি ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এদের বেশির ভাগই জরায়ু ক্যানসারের জন্য তেমন ঝুঁকিপূর্ণ নয়। এইচপিভি-১৬, এইচপিভি ১৮, এইচপিভি-৬, এইচপিভি-১১ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাসের আক্রমণ হলেই যে ক্যানসারের সৃষ্টি হয়, তা নয়। স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত নারীদের জরায়ু প্রায়ই এইচপি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। এতে কোনো উপসর্গ থাকে না বা শারীরিক পরীক্ষায় কোনো চিহ্ন বা ক্ষত পাওয়া যায় না। এর জন্য কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন নেই। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাবলে ১৮-২৪ মাসের মধ্যে জরায়ু প্রায় সব এইচপি ভাইরাস থেকে মুক্ত হয়ে যায়। জরায়ুতে এইচপি ভাইরাস দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে, জরায়ু কোষে পরিবর্তনের সূচনা করে। একসময় তা ক্যানসারে রূপ নেয়। এইচপিভির প্রতিষেধক টিকা এইচপিভি-১৬, এইচপিভি-১৮, এইচপিভি-৬, এইচপিভি-১১-এর প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে।

কত বয়সে এ টিকা দিতে হবে?
এ টিকা এইচপিভির প্রতিষেধক। তাই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আগেই টিকা দিতে হয়। আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) নিয়মানুযায়ী নয় থেকে ২৫ বছর বয়সে এ টিকা কার্যকর হয়। গর্ভাবস্থায় এ টিকা প্রদান এখনো অনুমোদন পায়নি। এইচপিভি ইনফেকশন হয়ে যাওয়ার পর বা ক্যানসার হয়ে যাওয়ার পর টিকা দিলে কোনো কাজে আসে না। আর এ টিকা গ্রহণকারীকেও নিয়মিত পেপস স্মেয়ার টেস্টে অংশ নিতে হবে।

জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

 বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন (মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর) মেনে চলা।
 অধিক সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকা।
 ধূমপান বন্ধ করতে হবে। অন্যের ধূমপানে যাতে নিজের ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে, অর্থাৎ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার না হওয়া।
 বন্ধ করতে হবে পানের সঙ্গে জর্দা ও সাদা পাতা খাওয়া, দাঁতের গোড়ায় গুল (তামাকের গুঁড়া) লাগানো।
 সুষম খাবার খেতে হবে। প্রতিদিন তিন-চারবার ফল, শাকসবজি ও তরকারি খেতে হবে।
 পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যসম্মত ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করা। সামাজিক অনুশাসন মেনে চলা।
 নিয়মিত পেপস স্মেয়ার টেস্টে অংশ নেওয়া।

উল্লিখিত বিষয়গুলো বেশি বেশি প্রচার করলে এবং ঘরে ঘরে এসব তথ্য পৌঁছে দিতে পারলে উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও জরায়ুমুখের ক্যানসার এবং এ ক্যানসারজনিত মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। এর সঙ্গে যদি সঠিকভাবে এইচপিভি টিকা দেওয়া যায়, তাহলে এ রোগ প্রতিকারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


Leave a comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।


*


hi
online partners namaj.info bd news update 24 Add

Read previous post:
বিশ্বের কয়েকটি মুসলিম দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি, যেখানে যৌন পেশাকে অবৈধ বলা হয় না !!!

নারী যৌনকর্মী বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার 'বারাঙ্গনা' কবিতায় নারী যৌনকর্মীদের 'মানুষ' হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কবিতার প্রতিটি লাইনে ছিল...

Close