মাদক তাড়ানোর উপায় , স্মৃতিকে ‘কিউয়ি’ করে মাদক তাড়ানো যায় !!!
মাদক আক্রান্তদের জন্য বেশ একটি সুখবর নিয়ে এলেন চীনের গবেষকরা৷ মাদক থেকে দূরে থাকার জন্য ভিডিও’র সাহায্যে স্মৃতির ওপর প্রভাব ফেলে মাদকের নেশা তাড়ানোর এই গবেষণা বেশ কার্যকরী হবে বলে মনে করছে বিজ্ঞান৷
ইংরেজিতে শব্দটা হল ‘কিউয়িং’৷ বা ‘কিউ’ করা৷ এর মানেটা স্পষ্ট করে বলতে গেলে বলতে হবে চলচ্চিত্রের বা ভিডিও এডিটিং-এর পরিভাষার ব্যাখ্যা৷ চলচ্চিত্রের সম্পাদনার সময় একটি বিশেষ দৃশ্যের ছবিগুলিকে পরপর সাজানোকেই বলা হয়ে থাকে কিউ করা৷ যাতে একটার পর একটা দৃশ্য পারম্পর্য বজায় রেখে একে অপরের সহায়তা করে কাজটা করা যায়৷ পরিশেষে গড়ে ওঠে একটি পূর্ণাঙ্গ দৃশ্য বা ‘সিন’৷ সুতরাং, চলচ্চিত্র বা টেলিভিশনের ছবি সম্পাদনার ক্ষেত্রে এই কিউয়িং একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে যে তাতে কোথাও কোনো সন্দেহ নেই৷ সঠিক কিউ না থাকলে কোনো ছবিই সম্পূর্ণ চেহারা নিতে পারে না৷
চীনের একদল গবেষক এই কিউ’এর পদ্ধতিটিকেই ব্যবহার করে চমৎকারভাবে মাদক আক্রান্তদের চিকিৎসা করেছেন৷ দেখা গেছে সে পরীক্ষা দিব্য সাফল্য পেয়েছে পরিশেষে৷ কীভাবে? সেটাই ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাঁরা জানিয়েছেন, মানুষের
মস্তিষ্কে যে কোনো সুখ বা দুঃখের ঘটনাই একটা ছবি তৈরি করে রাখে৷ বিশেষ করে মাদক আক্রান্তদের ক্ষেত্রে সেই ছবিটা সবসময়েই মস্তিষ্কের বিশেষ একটি এলাকায় জড়ো হয়৷ যে মাদকে আক্রান্ত, সেই মাদকটি সেবন করার পর তার মস্তিষ্ক সেই স্মৃতিটিকে চিনতে পারে এবং সুখকর এক স্মৃতির বোধে সে পৌঁছায়৷ যে বোধ খুব আরামদায়কও বটে৷
সেটাই হল নেশার নেশাগ্রস্ততার কথা৷ চীনের গবেষকরা কীভাবে বিষয়টিকে মাদক আক্রান্তদের ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়েছেন, তা ব্যাখ্যা করে বলতে গিয়ে তাঁরা সায়েন্স জার্নালে লেখা নিবন্ধে জানাচ্ছেন, মোট ২২ জন হেরোইন মাদকে আসক্তকে তাঁরা গবেষণার জন্য বেছে নেন৷ যারা প্রায় সকলেই ১১ বছর আগে এই নেশা ত্যাগ করেছেন৷ দেখা যায়, সচরাচর এ ধরণের নেশায় একবার আসক্ত হয়ে গেলে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেও আবারও নেশায় ফিরে আসাটা প্রায় সব ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে৷ কারণ হেরোইন জাতীয় রাসায়নিক মাদকের নেশা পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া অসম্ভব৷ এরপর গবেষকরা ওই বারোজনের স্মৃতিতে হেরোইন মাদকের প্রভাব ফিরিয়ে আনতে নেশার ভিডিও ফুটেজ দেখান৷ দেখা যায়, এরপরে হেরোইনে আসক্তেরা আর হেরোইন চাইছেন না৷ বরং ভিডিও ফুটেজ দেখেই নেশার বোধটা পেয়ে যাচ্ছেন৷
এই যে নেশা ছাড়াই নেশাকে স্মৃতিতে ফিরিয়ে আনা, এটাকেই গবেষকরা বলছেন ‘কিউ’ করা৷ মানে নেশার দাস হয়ে পড়ার পর আসলে নেশার মাধ্যমে মানুষ কী পেতে চায়? বিজ্ঞানের জবাব, মস্তিষ্ক এবং দেহমনের একটা প্রফুল্ল ভাব৷ সেই প্রফুল্ল ভাবটির তো একটা নির্দিষ্ট স্মৃতি রয়েছে! সেটাকেই যদি ফিরিয়ে আনা যায় তাহলে আর নেশার প্রয়োজন কী বলুন? সেক্ষেত্রে স্রেফ কিছু স্মৃতিকে মস্তিষ্কে ফিরিয়ে এনে দিতে পারলেই হেরোইনের মতো ক্ষতিকারক রাসায়নিক মনাব শরীরের কোনো রকমের ক্ষতি করতে পারবে না৷ সুতরাং, ব্যাপকহারে কাজে লাগালে এই গবেষণার ফসল, অর্থাৎ কিউয়িং’এর মাধ্যমে মাদক আক্রান্তদের দিব্যি চিকিৎসা করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেওয়া যাবে৷
‘শুধু যদি অ্যালকোহলে আক্রান্ত বা মদাসক্তদের ক্ষেত্রেও এই গবেষণা কাজ করে, তাহলে সেটা আরও ভালো হয়৷’ বলেছেন, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেমরি অ্যাডিকশন বিভাগের প্রধান ড. অ্যামি মিল্টন৷ ড. মিল্টন এই চীনা গবেষণার সাফল্যে অত্যন্ত উৎসাহিত৷ তিনি বলছেন, এই পথেই এবার মদাসক্তদের ক্ষেত্রেও একটা প্রচেষ্টা নিয়ে দেখা যেতে পারে৷
দেখা যাক, সেটা কাজে দেয় কিনা!
[ ভাল লাগলে পোস্ট এ অবশ্যই লাইক দিবেন , লাইক দিলে আমাদের কোনো লাভ অথবা আমরা কোনো টাকা পয়সা পাই না, কিন্তু উৎসাহ পাই, তাই অবশ্যই লাইক দিবেন । ]
Leave a comment