• hi

বাংলাদেশে চালু হল বাসের ই টিকিট

hi

প্রতিদিন লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে বাসে ওঠার হ্যাপা অনেক। এ ঝামেলা এড়াতে চালু হচ্ছে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা এসপাস। মোরশেদ হোসেন লিওনের অফিস উত্তরার হাউস বিল্ডিংয়ে। তবে বিভিন্ন কাজে প্রায়ই তাঁকে মতিঝিলে যেতে হয়। পথে নিত্য ঝামেলা। লাইনে দাঁড়াও, টিকিট কাট_কত কী! তবে দুই সপ্তাহ ধরে তিনি বেশ আরামেই আছেন। ওসব টিকিট-লাইনের ঝামেলা নেই। পকেটে আছে স্মার্ট কার্ড পেমেন্ট গেটওয়ে বা এসপাস। বাস এলে দরজার কাছে থাকা যন্ত্রে পাসটি ছুঁইয়ে উঠে পড়লেই হলো। লিওন বলেন, ‘উন্নত দেশের তুলনায় দেরিতে হলেও সুবিধাটি চালু হয়েছে। খবর পেয়ে তাই দেরি করিনি। দুটি কার্ড করে নিয়েছি। এতে প্রতিবার টিকিট কাটার ঝামেলা নেই, আবার সাশ্রয়ীও! কার্ড পেতেও তেমন ঝামেলা পোহাতে হয়নি।’ শুধু মোরশেদই নন, এই ই-টিকিটিং সেবায় ইতিমধ্যে ৭৫০ জন যাত্রী যুক্ত হয়েছেন। তাঁরা এখন বাসে চড়ছেন টিকিট কাটার হ্যাপা ছাড়াই।
যেভাবে এসপাস
এসপাস ডিজিটাল তথ্য আদান-প্রদান করার এক ধরনের কার্ড। ওঠা ও নামার সময় এটি বাসের মেশিনের সঙ্গে ধরতে হবে। ফেলিকা কার্ড নামের বিশেষ এই ইলেকট্রনিক কার্ডের সঙ্গে যুক্ত হবে বাসে থাকা রিডারটি। যাত্রী কত দূর ভ্রমণ করেছেন যন্ত্রটি তা হিসাব করবে আর দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেবে। ডিজিটাল টিকিটিং সিস্টেমের এ প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। প্রকল্পে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন বোর্ড (ডিটিসিবি)। জাপানের সনি করপোরেশনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে এতে। আইসি কার্ড সরবরাহ করছে এন-ওয়েভ কম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনে (বিআরটিসি) বাসসেবায় ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা আরো সহজ ও আধুনিক হয়েছে।
এই কার্ড ব্যবহারে নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা আছে কি না জানতে চাইলে প্রকল্পের কারিগরি কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘এই কার্ড পুরোপুরি নিরাপদ। যাত্রী যদি তাঁর কার্ড হারিয়ে ফেলেন তাহলে আমাদের শুধু জানালেই হবে, আমরা তাৎক্ষণিক কার্ডটি বন্ধ করে দিতে পারব। জাপানের মেট্রো রেলও এ প্রযুক্তিতে চলে। শুধু বাংলাদেশের প্রয়োজন অনুসারে একে একটু উপযোগী করে নেওয়া হয়েছে।’

উদ্যোগ দুই বছর আগের
এন-ওয়েভ কম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান আলী জানান, ২০০৯ সালের ১৬ এপ্রিল এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে টিকিট ছাড়া শুরু হয় ১০ মার্চ। আপাতত উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে মতিঝিল রুটের এসি বাসের জন্য এ সেবা চালু আছে।
প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম জানান, কিছুদিনের মধ্যেই বিআরটিসির নন-এসি বাসের যাত্রীদের জন্যও এ কার্ড বিতরণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু হলেও প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো উদ্বোধন করা হয়নি। ১৮ এপ্রিল যোগাযোগমন্ত্রী, জাইকা ও বিআরটিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন।

যেভাবে কার্ড নিতে হবে
এ প্রকল্পের আওতায় এ মাসে পাঁচ হাজার এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে মোট ৩৩ হাজার যাত্রীর মাঝে এ কার্ড বিতরণ করা হবে। বর্তমানে আবদুল্লাহপুর ও হাউস বিল্ডিংয়ের বিটিআরসি কাউন্টারে এ কার্ড পাওয়া যাচ্ছে। বাস অপারেটরের কাছেও কার্ড পাওয়া যাচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এ রুটের সব কাউন্টারেই এসপাস দেওয়া হবে বলে বিআরটিসি সূত্র জানিয়েছে। কেবল একটি ফরম পূরণ করলেই কার্ড পাওয়া যাবে।

ব্যালান্স রিচার্জ এবং দেখা
এটি একটি প্রিপেইড কার্ড। অগ্রিম টাকা জমা দিয়ে কার্ডটি ব্যবহার করতে হবে। যাতায়াতের সময় গাড়িতে থাকা রিডার যন্ত্রে ব্যালান্সও দেখে নেওয়া যাবে। রিচার্জ করতে হবে নির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে। ব্যালান্স সম্পর্কে আমিনুল ইসলাম জানান, একজন যাত্রী যখন গাড়িতে উঠবেন তখনই তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ওই রুটের সর্বোচ্চ ভাড়া কেটে নেওয়া হবে। যেমন_কেউ যদি আবদুল্লাহপুর থেকে ফার্মগেটে আসার জন্য আবদুল্লাহপুর-মতিঝিল রুটের কোনো বাসে ওঠেন, সে ক্ষেত্রে আবদুল্লাহপুর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যত ভাড়া হয় তার সম্পূর্ণটা কেটে নেওয়া হবে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে। তবে তিনি যখন ফার্মগেটে রিডারে কার্ড পাঞ্চ করে নেমে যাবেন, তখন তাঁর অ্যাকাউন্টে ফার্মগেট থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাওয়ার যে ভাড়া, সেটি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ব্যালান্স দেখার জন্য আপাতত রিডার সুবিধা থাকলেও শিগগিরই ওয়েবেও ব্যালান্স দেখার সুবিধা চালু হবে বলে জানান তিনি।

যাত্রীরা যা বলেন
যাত্রীরা জানান, নতুন এ সুবিধার ফলে প্রতিদিন আলাদা করে টিকিট কাটতে হচ্ছে না। এতে সময়ের যেমন সাশ্রয় হচ্ছে, তেমনি যতটুকু ভ্রমণ করা হচ্ছে, ঠিক ততটুকুই বিল কাটা হচ্ছে। মোরশেদ হোসেন লিওন বলেন, ‘কেবল একটি রুটেই নয়, আমরা চাই, এ ধরনের সিস্টেম সারা দেশেই চালু হোক। তাহলেই এ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুবিধা আমরা পাব। বর্তমানে গাড়িতে যে রিডার যন্ত্র রয়েছে, সেটি একজন লোক ধরে রাখেন, তারপর আমাদের পাঞ্চ করতে হয়। আমার মনে হয়, যন্ত্রটি গাড়িতে স্থায়ীভাবে লাগিয়ে দেওয়া উচিত। এ জন্য আলাদা লোক রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।’ এ প্রসঙ্গে এন-ওয়েভের আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প। আমরা দেশব্যাপী এটি চালুর পরিকল্পনা করছি। যাত্রীরা অনেকেই জানেন না এটি কিভাবে ব্যবহার করতে হয়। তাঁদের শেখানোর জন্যই মূলত একজন করে সুপারভাইজারের ব্যবস্থা রেখেছি।’
প্রশংসা করলেও আশঙ্কার কথা জানালেন অনেকেই। আবদুল্লাহপুর থেকে কাওরান বাজারে আসতে হয় ফারজানা ইয়াসমিনকে। তিনি বলেন, ‘অল্প কয়েক দিন ধরে কার্ডটি ব্যবহার করছি। এখনো কোনো সমস্যা পাইনি। তবে আমাদের দেশে কোনো সুবিধা চালু হলে তিন-চার মাস পর সেটি মুখ থুবড়ে পড়ে। এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে যেন তেমন পরিণতি না হয়, সেই প্রত্যাশা।’

শিগগিরই যেসব রুটে
বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, শিগগিরই মিরপুর-১২ থেকে মতিঝিল, মোহাম্মদপুর থেকে বাড্ডা এবং বালুঘাট থেকে মতিঝিল রুটের বিটিআরসি বাসেও সুবিধাটি চালু করা হবে। অন্য রুটের যাত্রীরা কবে নাগাদ সুবিধাটি পাবে_এমন প্রশ্নের জবাবে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সব রুটে কার্ড বিতরণ শেষ করতে হবে। তবে এর অনেক আগেই আমরা সব যাত্রীর হাতে কার্ড তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’ সব কার্ড বিতরণের মাধ্যমে যে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, তা দিয়েই ঢাকার মেট্রো রেলের বিষয়ে গবেষণা করা হবে বলে জানান তিনি।

 


Leave a comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।


*


hi
online partners namaj.info bd news update 24 Add

Read previous post:
ফেসবুকে বন্ধু

আজকের যুগে আড্ডাস্থল বটতলা বা উঠান-বারান্দা হারিয়ে গেছে। সরাসরি যোগাযোগের সুযোগও এখন সীমিত। তাই সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলো তৈরি হয় ও...

Close