স্বাস্থ্য রক্ষায় ভিটামিন-সি
ভিটামিন সির আরেক নাম অ্যাসকরবিক এসিড। ভিটামিন-সি শরীরে সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। তাই দৈনিক শরীরে এই ভিটামিনের জোগান দিতে হয়।
ভিটামিন-সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন-সি শরীরে থাকলে ফ্রি র্যাডিকেলের নানা ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ক্ষতির হাত থেকে আমরা রেহাই পাই। ভিটামিন-সি অত্যন্ত উপকারী এক ভিটামিন। শুধু শুকনো গোশত আর রুটি সম্বল করে যেসব নাবিক দীর্ঘদিন সমুদ্রে পাড়ি জমাতেন তারা স্কার্ভি রোগে আক্রান্ত হতেন। ১৭৫৩ সালে স্কার্ভি রোগে ২০ লাখ লোক মারা যায়। চিকিৎসক জেমস লিন্ড সেই সময় বলেন, স্কার্ভি থেকে বাঁচতে হলে ফল ও টাটকা সবজি খেতে হবে। সে জন্য তখন ব্রিটিশ নৌবাহিনী বাধ্যতামূলক করল লেবু খাওয়া। ১৯৩২ সালে জৈব রাসায়নিক সিজি কিং লেবুর মূল উপাদানটিকে চিহ্নিত করলেন ভিটামিন-সি হিসেবে। ভিটামিন-সি শুধু স্কার্ভি প্রতিরোধে নয় অন্যান্য নানা রোগের হাত থেকেও আমাদের বাঁচায়। ভিটামিন-সি যেকোনো ক্ষত তাড়াতাড়ি সারিয়ে তোলে। শরীরের যেকোনো অংশের (অস্থি, দাঁত, ত্বক, শিরা) কোষের মধ্যকার পদার্থকে ভিটামিন-সি স্বাভাবিক অবস্থায় রাখতে সাহায্য করে।
ভিটামিন-সি শরীরকে আয়রন গ্রহণ করতে সাহায্য করে। আয়রন ফেরাস অবস্থায় থাকলে শরীর সহজে তা গ্রহণ এবং ব্যবহার করতে পারে। ভিটামিন-সি আয়রনকে সেভাবে রাখতে বিশেষ সহায়ক। এটি অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে। এ ছাড়া অ্যামাইনো এসিড মেটাবলিজমেও ভিটামিন-সি দরকার।
নানা ধরনের ভাইরাল ইনফেকশনের সাথে ভিটামিন-সি মোকাবিলা করতে পারে ও অসুখের উপসর্গ কমিয়ে দেয়। সাধারণ সর্দি কাশি ও ঠাণ্ডা লাগাতেও ভিটামিন-সি ভালো কাজ দেয়। এ ছাড়া শ্বাসতন্ত্রের অসুখ হওয়ার সম্ভাবনাও কমিয়ে দেয়। ভিটামিন-সি শরীর প্রতিদিন ঠিক মাত্রায় পেলে চট করে একটু বয়স হলেই চোখে ছানি পড়ে না। খেলোয়াড়দের শরীরে ভিটামিন-সি দরকার। যারা প্রতিযোগিতায় অংশ নেন তারা সপ্তাহ তিনেক আগে নিয়মিত ভিটামিন-সি খেলে শ্বাসতন্ত্রের অসুখ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। শারীরিক ও মানসিক পীড়নেরও উপশম ঘটায় ভিটামিন-সি। খুব বেশি টেনশনে আক্রান্ত কিংবা অবসাদগ্রস্ত রোগীকে ভিটামিন-সি দিয়ে ভালো ফল পাওয়া গেছে।
ভিটামিন-সি শরীরে বয়সের ছাপ পড়াকে পিছিয়ে রাখে। আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত যে ক্ষয় হয়, বয়সের যে পরিবর্তন আসে তা মূলত অক্সিডেশনের জন্য। ভিটামিন-সিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা কোষাবরণকে মজবুত করে, সহজে ভেঙে যেতে দেয় না। এভাবে শরীর ও ত্বক রক্ষা পায়। ভিটামিন-সি কোলেস্টেরলের মাত্রাকে আয়ত্তে রাখে ও হৃৎপিণ্ডকে রক্ষা করে। দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী রোগী, পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও বেড সোরের রোগীর জন্যও দরকার ভিটামিন-সি। ক্যান্সার রোগাক্রান্তদের জন্য পরোক্ষভাবে লড়াই করে ভিটামিন-সি। চুলের সৌন্দর্য রক্ষায় ভিটামিন-সির অবদান আছে। এটি চুলকে শুষকতা ও ভঙ্গুরতার হাত থেকে রক্ষা করে। চুলের স্বাভাবিকতা বজায় রাখে। রোদে পোড়া ত্বকের জন্য ভিটামিন-সি উপকারী। রোদ্দুরে ঝলসানো ত্বক, শরীর ঠিকমতো ভিটামিন-সি পেলে তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। বেশি করে ভিটামিন-সি খেলে রোদে পোড়া ভাব তাড়াতাড়ি চলে যায় ও ত্বক সুস্থ হয়ে ওঠে। কোনো রোগ না থাকলেও সুস্থ ও সুন্দর ত্বকের জন্য ভিটামিন-সি প্রয়োজন। কোলাজেন তৈরিতে ভিটামিন-সির মুখ্য ভূমিকা আছে। ত্বক সুস্থ ও সুন্দর রাখতে কোলাজেনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ; তাই সজীব, সুন্দর ত্বকের জন্য প্রয়োজন ভিটামিন-সি।
কোথায় পাবেন ভিটামিন-সি
প্রধানত সবুজ শাকসবজি, টক ফলে রয়েছে ভিটামিন-সি। পালংশাক, নটেশাক, পেয়ারা, কমলালেবু, আমলকী, লেবু, আম, পেঁপে এসবে রয়েছে ভিটামিন-সি। এ ছাড়া অঙ্কুরিত ছোলা, শিম বীজ ও ডালেও পাওয়া যাবে।
নিয়ম করে প্রতিদিন শাকসবজি ও মৌসুমি ফল দুবেলা খেলে ভিটামিন-সি-এর চাহিদা পূর্ণ হবে। এ ছাড়া কাঁচা সবজি বা সালাদ খাবার অভ্যাসও গড়ে তুলতে হবে। তাজা সবজি, তাজা ফলে যতটা ভিটামিন-সি আছে বাসি ফল ও সবজিতে নেই। তাই তাজা ফল ও সবজি খাবেন।
ভিটামিন-সি কীভাবে নষ্ট হয়?
আমরা না জেনে প্রচুর ভিটামিন-সি নষ্ট করে ফেলি। রান্নার পদ্ধতি ঠিক না থাকায় এটি হয়।
- খুব কুচি বা মিহি করে শাকসবজি কাটবেন না।
- অতিরিক্ত পানি দিয়ে সিদ্ধ করবেন না। সবজি সিদ্ধ পানি ফেলে দেবেন না।
- অতিরিক্ত ফুটাবেন না। অল্প সময়ে ও বেশি আঁচে রান্না করবেন।
- রান্নার পর তরকারি গরম রাখার জন্য আঁচে রাখবেন না।
ফেসবুকে আমি
Leave a comment