মানবদেহে এইচআইভিরোধক টিকা আবিষ্কারে নতুন অগ্রগতি
এইচআইভি ভাইরাসের কারণে মানুষের এইডস রোগ হয়। এই এইডস রোগ থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে বিজ্ঞানীদের চলছে ব্যাপক অন্বেষা। এইচআইভি ভাইরাস অনেক শক্তিশালী একটি ভাইরাস।এর রয়েছে মিউটেশন করে নিজের জেনেটিক কোড পাল্টিয়ে ফেলার ক্ষমতা। ফলে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময়ে এই ভাইরাসের নিকট পরাজিত হয়েছেন। তারা যখনই কোন প্রতিষেধক নিয়ে আসছেন তখনই কেন জানি মিউটেশনের জালে আটকা পড়ছেন। এইডস বা এইচআইভি আক্রান্তদের জীবনে নতুন আশার সঞ্চার করেছেন রাশিয়ার একদল বিজ্ঞানী। এইচআইভি প্রতিরোধের জন্য একটি নতুন উদ্ভাবিত টিকার ওপর পরীক্ষা চালিয়ে আশা জাগানিয়া ফল পেয়েছেন রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা। রাশিয়ার ‘স্টেট রিসার্চ সেন্টার ফর ভাইরোলজি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি’ সংক্ষেপিতভাবে ভেকটর, এইচআইভি ভাইরাস প্রতিরোধকারী এ নতুন প্রতিষেধকের ওপর পরীক্ষা চালায়। রাশিয়ার এই বিজ্ঞানীরা আশা করছেন তারা পুরনোদের মতো ব্যর্থ হবেন না। তারা মিউটেশনকে এবং জেনেটিক গঠনকে ভালোভাবে ব্রেইনে নিয়েই কাজে নেমেছেন। ভেকটরের বিজ্ঞানীরা এ প্রতিষেধকটির ওপর প্রথম দফার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সাফল্যজনকভাবে সম্পন্ন করেছেন। গবেষণা কেন্দ্রটির পরিচালক আলেকজান্ডার সেরগেইয়েভ জানান, পরীক্ষার সময় শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধক বা অ্যান্টিজেন সঞ্চারিত করা এ প্রতিষেধকটির কোষীয় সাড়া আশানুরূপ ছিল। সাফল্যের সঙ্গে প্রথম দফা পরীক্ষা শেষ করার পর ভেকটরের গবেষকরা এখন এই প্রতিষেধকটির ওপর দ্বিতীয় দফা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। প্রতিষেধকটি নিয়ে আলেকজান্ডার সেরগেইয়েভ চাচ্ছেন আরো গবেষণা চালাতে। তার মতে , এইডস এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ লড়তে এটি হবে দারুণ হাতিয়ার। ভেকটর থেকে এর আগে ঘোষণা দিয়েছিল তাদের গবেষকরা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী এবং উন্নতমানের প্রতিষেধক তৈরির পথে এগিয়ে চলেছেন। ১৯৮৭ থেকে ২০১১ সালের নভেম্ব্বরের ১ তারিখ পর্যন্ত রাশিয়ায় এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার ৬ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭৯টি ঘটনা রেকর্ড করা হয় বলে সম্প্রতি প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখানো হয়। ২০০৬-এর পর থেকে এ প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা আগের থেকে দ্বিগুণ বলেও জানানো হয় পরিসংখ্যানে। আক্রান্তদের মধ্যে ১ লাখ ৪ হাজার ২৫৭ জন এর মধ্যেই মারা গেছেন। এইচআইভি বা ‘হিউমান ইমিউনডিফিসিয়েন্সি’ ভাইরাস শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলোকে ধ্বংস করে ফেলার মাধ্যমে আক্রান্তের শরীরের রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রমকে সম্পূর্ণভাবে পঙ্গু করে ফেলে। এর ফলাফল হিসেবে আক্রান্ত ব্যক্তি যে কোনে সাধারণ রোগের বিরুদ্ধেও লড়াই করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুমুখে পতিত হয়। এইচআইভির সবচেয়ে মারাত্মক ধাপকে এইডস বা ‘অ্যাকুয়ার্ড ইমিউন ডিফিয়েন্সি সিনড্রম’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই সিনড্রোম থেকে মানুষকে বাঁচানোই হচ্ছে বিজ্ঞানীদের চ্যালেঞ্জ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। ২০০৯ সালে প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৃথিবীতে এইচআইভি আক্রান্ত লোকের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৩৩ লাখ। এইচআইভি বা এইডসকে বর্তমানে পৃথিবীর জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক হুমকির অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বের নিম্ন এবং মধ্যআয়ের দেশগুলোতেই এর হুমকি সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলোয়। এইচআইভি চিকিৎসার জন্য বিশ্বের প্রায় ১ কোটি লোকের এ মুহূর্তে অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপির প্রয়োজন হলেও অধিকাংশ আক্রান্তেরই এই চিকিৎসা নেয়ার আর্থিক সক্ষমতা নেই। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে সাফল্য রাশিয়ার গবেষকরা দেখিয়েছেন সেটা মানবজাতিকে এইডসের অভিশাপ থেকে মুক্ত করবে। তারা এই চর্চার আরো অগ্রগতি দেখতে চান।
Leave a comment